গল্প :-খুনের মাঠ
কলমে :-রামকৃষ্ণ দাস
তারিখ:-২৮-০৭-২০২৫
তারিখ কুড়ি সাত দুই হাজার পচিশ।
আজ যে কাহিনীটি শোনাবো সে কোন গল্প নয় ।একটা বাস্তব কাহিনী ।বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন এই মাঠ। যেখান দিয়ে বয়ে চলেছে দুই দেশের বুক চিরে কুলু কুলু রবে ইছামতি নদী ।পূর্ব পাড়ে বাংলাদেশ ।সেখানে যতদূর চোখ যায় সারি সারি তালগাছ বাঁশগাছবিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু খেজুর গাছ দেখা যায়।
পশ্চিম তীরে ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ছোট অনামী অখ্যাত গ্রাম ধাউডাঙ্গা। এখান দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতি নদী বাকি অর্ধাংশ বাংলাদেশের মধ্যে পড়েছে। আমাদের এই অংশে তারকাটা উঁচু করে বেড়া দেওয়া হয়েছে ।যেটা সীমান্ত থেকে চার ৫০০ মিটার দূরে মূল ভূখণ্ডের দিকে ।যার মধ্যে চাষ যোগ্য জমিও আছে। মাঝে মাঝে এক দেড় কিমি দূরে দূরেগেট। সীমান্ত মাঠে যাবার জন্য।দুই দেশকে আলাদা করে রেখেছে এই নদী।নদীর মধ্য বরাবর আমাদের ভারতবর্ষের মধ্যে পড়ে।
এই কাঁটাতারের বেড়ার বাহিরে কখনো ভিতরে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীরা পাহারা দেয় ।বিশেষভাবে গেটের মুখে কাঁটাতারেরবেড়া জমিতে কাজে যায়। এই গেট সকাল সাতটায় এক ঘন্টা খোলা থাকে ।দুপুর ১২ টায় এক ঘন্টা খোলা থাকে ও বিকাল ৩ টায় এক ঘন্টা সন্ধ্যা ৫ টায় ।মোট চারবার মাত্র এই গেট খোলা থাকে । এর বেশি নয়।
বছর চল্লিশের মজুর দিননাথ সহ কয়েকজন লোক এই কাটা তারের বেড়ার মধ্যে ক্ষেতমজুরের কাজ করিতে যায় ।এই মাঠে বড় কোন গাছপালা খুব একটা নেই বললেই চলে ।মাঝে মাঝে দূরে বুনো ঝোপ ও দু একটি খেজুর গাছ লতা গুল্ম দেখা যায়। গ্রীষ্মের মধ্যাহ্নে প্রখর রৌদ্রে শুকনো বাতাসে যেন প্রচণ্ড তাপ বিকিরণ করিতেছে ।প্রচন্ড জল পিপাসায় প্রাণ বুঝি যায় ।কিন্তু তখনো গেট খোলেনি। কিছুক্ষণের মধ্যে সীমান্তরক্ষীরা গেট খুলে দিল।
তখন একজন লোক জল নিয়ে এলো বটে ।কিন্তু দীনাথ জল নিতে গিয়ে আর জল নিতে পারল না। হাত লম্বা করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল এই দৃশ্য দেখে জলের পাত্রটিও মাটিতে পড়ে গেল ।দেখতে দেখতে ক্ষুধায় তৃষ্ণায় দিনোনাথের মৃত্যু হল। অন্যান্য চাষীদেরও মন খারাপ হয়ে গেল। এই মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল এই খুনে মাঠ। হায়রে নিয়তি।