সে জানে না আমি কে, কিন্তু আমি জানি সে কে…
দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
তাদের বন্ধুত্বের গল্প শুরু হয়েছিল ছাত্রাবস্থায়—একটি বইয়ের পৃষ্ঠায় চোখ আটকে যাওয়া থেকে। ধীরে ধীরে সে বন্ধুত্ব গাঢ় হয়ে ওঠে। একসাথে ঘোরা, কবিতা পড়া, সন্ধ্যার আকাশ দেখা, চুপচাপ পাশে বসে থাকা—সবই ছিল তাদের সম্পর্কের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সময় গড়ায়।
একজন আক্রান্ত হয় আলঝেইমার রোগে।
অপরজন প্রতিদিন তাকে সময় দেয়। নিজের হাতে খাওয়ায়, ওষুধ খাওয়ায়, বিছানায় শোয়ায়, রাতের গল্প শোনায়। হাত ধরে হাঁটতে নিয়ে যায়। আর যে ভুলে গিয়েছে সবকিছু, তাকিয়ে থাকে নিরীহ চোখে, বিভ্রান্ত মুখে।
চারপাশের অনেকেই বিস্ময় মিশ্রিত কৌতূহলে বলে,
— “সে তো তোমাকে আর চিনেই না! প্রতিদিন এভাবে পাশে থাকার মানে কী?”
একটা দীর্ঘ নীরবতা। তারপর এক গভীর শান্ত কণ্ঠে উত্তর আসে—
— “হ্যাঁ, সে জানে না আমি কে। বহু বছর ধরেই না।
কিন্তু আমি তো জানি সে কে!
সে আমার ভালোবাসা, আমার আস্থার মানুষ।
ভুলে গেলে কি ভালোবাসা ফুরিয়ে যায়?
ভালোবাসা তো কোনো স্বীকৃতির মুখাপেক্ষী নয়, এটা তো নিজের ভেতরের প্রতিশ্রুতি।”
সন্ধ্যার আলো ক্রমশ ম্লান হয়। দুই বন্ধু পাশাপাশি বসে থাকে।
একজন নিঃসঙ্গ, স্মৃতিশূন্য।
অপরজন গভীর ভালোবাসায় পূর্ণ, নিরন্তর সঙ্গী।
এ এক সম্পর্ক, যাকে কোনো রোগ, কোনো বিস্মৃতি ছিন্ন করতে পারে না।