শিরোনাম:- ঘোড়ার ডিম
কলমে:- রামকৃষ্ণ দাস
তারিখ:- ৩০-০ ৭ -২০২৫
প্রকাশ ছোটবেলা থেকে অন্য বাচ্চাদের থেকে একটু আলাদা। সে অন্য বাচ্চাদের সাথে মেশে না। নিজে যা বোঝে তাই নিয়ে একা একা খেলতে ভালোবাসে।
তার খেলাধুলা একটু আলাদা ধরনের। কখনো সুচ সুতা নিয়ে কি যেন একটা সেলাই করছে।
কখনো হাতুড়ি পেরেক হাতে নিয়ে গাড়ি তৈরি করছে । আবার কখনো ঘুড়ির সুতো ধরে দৌড়াচ্ছে ।এইভাবে শৈশবকাল কেটে গেল। ধীরে ধীরে কৈশোরে পদার্পণ করল। কিন্তু মনটা আগের মতোই একটু হাবলা গোছের রয়ে গেল। মা বললেন খোকা বাজারে যাচ্ছিস তোর দাঁতে ময়লা জমে আছে। বাজারে গিয়ে আখ কিনে খাস।
দাঁতের ময়লা খানিকটা কমে যাবে ।প্রকাশ বলল মা বাজার থেকে কি কিনে আনব ।মা বললেন তোর যা ইচ্ছা হয় তাই কিনে নিয়ে আয়। মা ঠিক করে বলো না কি আনতে হবে ।মা আবারও বললেন ঘোড়ার ডিম যা পাস তাই নিয়ে আয় ।
প্রকাশ আর প্রশ্ন করলো না । বাজারে গিয়ে আখ পেল না তাই কিছু কালোজাম কিনে খেতে খেতে ঘোড়ার ডিম খুজতে
লাগলো। সারা বাজার খুঁজে কোথাও ঘোড়ার ডিম পেল না যখন নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরবে ভাবছে ।এমন সময় এক কুমড়ো ওয়ালির সাথে দেখা। সে বলল এমন হন্তদন্ত হয়ে কিসের খোঁজ করছো। প্রকাশ বলল কি আর বলবো? মা বাজার থেকে ঘোড়ার ডিম নিয়ে যেতে বলল। কুমড়োওয়ালী খুব বুদ্ধিমতী ।সে প্রকাশকে বলল ঘোড়ার ডিম কি পেয়েছো বাছা ।
মিষ্টি কথা শুনে প্রকাশ কুমড়োওয়ালীর দিকে এগিয়ে গেল। কুমড়ো ওয়ালি ঝোক বুঝে কোপ মারলো ।কুমড়োর ঝুড়ি থেকে একটা পাকা চাল কুমড়ো নিয়ে বলল ।এই দেখো আমার কাছে টাটকা ঘোড়ার ডিম আছে। চাল কুমড়ো পাকা হলে তার গায়ে চুনের মত সাদা প্রলেপ পড়ে। প্রকাশ সেই চাল কুমড়ো ঘোড়ার ডিম ভেবে বেশিদামে কিনে নিয়ে বাড়ি পথে রওনা হল ।কিছুদূর আসতে আসতে এক শাকওয়ালীর সাথে দেখা হল। শাকওয়ালীর শাকের বোঝাটা একটু ভারী ছিল। তাই সে বোঝা টাকে একা মাথায় তুলতে পারছিল না ।সে বলল ভাই আমার বোঝা টাকে একটু মাথায় তুলে দেবে ।প্রকাশ বলল কেন দেব না? তুমি শাকের বোঝার একপাশে ধরো। অন্য পাশে আমি ধরছি। এই বলে কুমড়োটাকে রাস্তার একপাশে রেখে শাকের বোঝা মাথায় তুলে দিতে গেল ।কুমড়োটা গড়িয়ে পাশে বাগানের দিকে গেল ।ওই বাগানে থাকতো এক শিয়াল ।কুমড়ো গড়ানো দেখে দে ছুট।
প্রকাশ ভাবল আমার ঘোড়ার ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে গেছে ।সে ঘোড়ার বাচ্চার পিছনে পিছনে দৌড়াতে লাগলো ।দৌড়িয়ে হাঁপিয়ে উঠলো । সে আর বেশি দূর দৌড়াতে পারলো না। ঘামতে শুরু করল ।সেই ফাকে শিয়াল আবার ঝোপ ঝাড়ের মধ্যে লুকিয়ে পড়ল ।অবশেষে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরল। মা বললেন খোকা, আখ খেলে তো দাঁত পরিষ্কার হয়। কিন্তু জাম খেয়ে আরো বেশি দাঁত কালো করে এনেছিস। যাক বাজার থেকে কি কিনে আনলি।
মা আমি তো ঘোড়ার ডিম কিনে নিয়ে আসছিলাম। কিন্তু রাস্তায় এসে ঘোড়ার ডিম থেকে ঘোড়ার বাচ্চা ফুটে কোথায় পালিয়ে গেল জানিনা। মা ঘোড়ার ডিম বাচ্চা ছেলের কথা । কিছুই বুঝতে পারল না ।শুধু মাথায় হাত চাপড়ে বললেন হায় আমার অদৃষ্ট।