1. info@dainiknetrojolsahitthomagazine.com : দৈনিক নেত্রজল সাহিত্য ম্যাগাজিন : দৈনিক নেত্রজল সাহিত্য ম্যাগাজিন
  2. info@www.dainiknetrojolsahitthomagazine.com : দৈনিক নেত্রজল সাহিত্য ম্যাগাজিন :
শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৭:০৯ পূর্বাহ্ন

নতুন সকাল। কবি : সুমাইয়া ইসলাম স্নেহা

  • প্রকাশিত: রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে

নতুন সকাল

কবি:সুমাইয়া ইসলাম স্নেহা

রাহুল ছিল এক দরিদ্র গ্রাম্য ছেলে। তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল সীমিত, কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল বিশাল। সে জানত, শুধুমাত্র স্বপ্ন দেখলেই হবে না, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

তার বাবা ছিলেন একজন কৃষক, প্রতিদিন রোদে পুড়ে-বাদলায় ভিজে মাঠে কাজ করতেন। মা গৃহিণী হলেও সংসারের প্রতিটি কাজ সামলে ছেলের পড়াশোনার প্রতি নজর রাখতেন। রাহুল যখন কুপি বাতির নিচে বই নিয়ে বসত, তখন মা পাশে এসে বসতেন, যেন তার ছেলের স্বপ্নের পথের নীরব সাক্ষী।

কিন্তু শুধু ইচ্ছাশক্তি থাকলেই তো হবে না, সুযোগও দরকার। আর সেই সুযোগ পাওয়াটাই ছিল সবচেয়ে কঠিন।

সংগ্রামের শুরু:

গ্রামের স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাহুলের মেধা ও অধ্যবসায় দেখে একদিন বললেন,
— “তুমি যদি সত্যি বড় কিছু করতে চাও, তাহলে শহরের ভালো স্কুলে ভর্তি হও। কিন্তু জানো, সেখানে জায়গা পাওয়া সহজ নয়, আর সুযোগ পেলেও পরিশ্রম দ্বিগুণ করতে হবে!”

এই কথাগুলো রাহুলের মনে গভীরভাবে দাগ কাটল। কিন্তু শহরে পড়াশোনা করা কি এত সহজ? টাকা কোথায়? থাকার জায়গাই বা হবে কোথায়?

তবে রাহুল থেমে থাকার পাত্র ছিল না। নিজের কিছু পুরনো বই আর মা-বাবার দেওয়া সামান্য টাকা নিয়ে সে একদিন রওনা দিল শহরের উদ্দেশ্যে।

নতুন শহরে, নতুন লড়াই:

নতুন শহর, অপরিচিত রাস্তা, ব্যস্ত মানুষজন—সবকিছুই তার কাছে যেন অন্য এক জগত। গ্রামের শান্ত পরিবেশের তুলনায় শহর যেন এক বিশাল অচেনা বাস্তবতা।

ঠিক তখনই, সে সরকারি এক দফতরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। সেখানে তার দেখা হলো এক অফিসারের সঙ্গে। অফিসার তার কথা শুনে বিস্মিত হলেন।

— “তুমি এত দূর এসেছ নিজের চেষ্টায়? তোমার আত্মবিশ্বাস প্রশংসনীয়!”
— “আমি পড়তে চাই, বড় হতে চাই,” বলল রাহুল দৃঢ় কণ্ঠে।

অফিসার তাকে শহরের একটি ভালো স্কুলে ভর্তি হতে সাহায্য করলেন এবং থাকার ব্যবস্থা করতেও সহায়তা করলেন। কিন্তু রাহুল জানত, শুধু ভর্তি হলেই চলবে না—এখন আসল যুদ্ধ শুরু।

শহরের কঠিন পথচলা:

শহরের নতুন পরিবেশ তাকে প্রতিদিন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছিল। সহপাঠীরা ছিল ধনী পরিবারের সন্তান, তাদের পোশাক-আশাক, চালচলন, ব্যবহার—সবকিছুই ছিল অন্যরকম। প্রথম কয়েকদিন সে ক্লাসে একা বসত, কেউ তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না।

তবে রাহুল জানত, তার অস্ত্র একটাই—অধ্যবসায়। সে প্রতিদিন নতুন কিছু শিখতে লাগল। স্কুল শেষে লাইব্রেরিতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাত। অনেক রাত অবধি জেগে পড়ত, পরীক্ষার জন্য নয়, নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য।

রাতের একাকী ভাবনা:

এক রাতে ক্লান্ত হয়ে সে জানালার পাশে দাঁড়াল। বাইরে ঠাণ্ডা বাতাস বইছিল, আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। তার মনে একটিই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল—

“আমি কি পারব? আমি কি সত্যিই সঠিক পথে আছি?”

ঠিক তখনই মায়ের কথা মনে পড়ল—
“যত কঠিন হোক, তুমি যদি থেমে না যাও, তবে তুমি জয়ী হবে।”

সেই রাতের পর রাহুল আরও কঠোর পরিশ্রম শুরু করল।

সাফল্যের প্রথম সকাল:

পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলো। পুরো ক্লাস বিস্মিত!

শিক্ষক মঞ্চে উঠে বললেন,
— “এই বছর আমাদের স্কুলের সেরা ছাত্র হল রাহুল!”

কেউ বিশ্বাস করতে পারছিল না। যাকে সবাই একসময় অবহেলা করত, সে-ই আজ শ্রেষ্ঠত্বের শীর্ষে!

সেদিন রাহুল বুঝল, কঠোর পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না।

গ্রামে ফেরা, নতুন দিনের সূচনা:

বছর পেরিয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে রাহুল তার গ্রামে ফিরল। তবে এবার সে শুধু একজন স্বপ্ন দেখা ছেলে নয়, সে এক নতুন দিগন্তের আলো।

সে তার গ্রামে একটি স্কুল ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করল, যেন কেউ তার মতো সংগ্রাম করে হেরে না যায়।

সেদিন সূর্যোদয়ের দিকে তাকিয়ে রাহুল অনুভব করল—
এটি কেবল তার জীবনের নয়, পুরো গ্রামের জন্য এক নতুন সকাল!

শেয়ার করুন

আরো পড়ুন
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট