ছোট গল্প:রাজহাঁস
কবি:হালিমা সুলতানা
তারিখ :-১৭-০৫-২০২৫খ্রি
রাজহাঁস ৮ টা ডিম দিয়েছে প্রায় পনেরো দিন হলো।কিন্তু তার মনে অনেক কষ্ট সে শুধু ডিম দেওয়ার সময় ডিম গুলোকে একনজর দেখেছিল এরপর আর সে ডিম গুলোকে দেখতে পায়নি। মনের কষ্টে রাজহাঁস প্রায় খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে। রাজহাঁসের মনে সারাক্ষণ তার ডিমের ছবি ভেসে বেড়ায়।অনেক খোঁজ নেওয়ার পর রাজহাঁস জানতে পারে তার ডিম গুলো বাসার মালিক একটা মুরগী দিয়ে তাপ দিচ্ছে বাচ্চা ফোটানোর জন্য।এটা শুনার পর রাজহাঁস তো অনেক খুশি অনেক দিন পরে তার বংশধর আসবে পৃথিবীতে তার নিজের বংশ রক্ষা করবে সেই আনন্দে রাজহাঁস নিজের কোমড় দুলিয়ে নাচতে শুরু করলো এবং যে মুরগী তার ডিম গুলোকে তাপ দিচ্ছে সেই মুরগী কে খুঁজে বাহির করল।যখন ঐ মুরগী টা নিজের বাসা থেকে বাহির হতো খাদ্য খাওয়ার জন্য তখন রাজহাঁস দৌড়ে সেই মুরগীটার কাছে গিয়ে নিজের ভাগের খাদ্য মুরগী টা কে খেতে দিত। প্রথম প্রথম মুরগী টা রাজহাঁস কে ভয় পেলেও একটা সময় রাজহাঁস আর মুরগীটার মাঝে ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে যায়। রাজহাঁসও নিজের ক্ষমতার বাহিরে গিয়ে মুরগী টার সেবা করার চেষ্টা করে। এভাবে কেটে গেলো পনেরোটা দিন। সকাল সকাল মুরগী টা বুঝতে পারলো ডিম ফেটে রাজহাঁসের ছানা গুলো বাহির হওয়ার সময় হয়েছে তাই সে আর তখন খাদ্য খাওয়ার জন্য নিজের বাসার বাহিরে বেরহয়নি। এদিকে রাজহাঁস তো মুরগী টা কে দেখতে না পেয়ে মহা চিন্তায় পরে গেলো।মুরগীটার কি হয়েছে? মুরগী টা কি তার ডিম গুলোকে সঠিক ভাবে তাপ দিতে পারেনি? এরকম হাজার টা চিন্তা নিয়ে রাজহাঁস সকাল থেকে খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে মনের কষ্টে কান্না করতে শুরু করলো।এতোদিন পরে যাও তার বংশধর পৃথিবীর আলো দেখবে ভেবে সে খুশিতে আত্মহারা ছিল সেই খুশি বুঝি এক মূহুর্তে শেষ হয়ে গেলো।অন্য দিকে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা এলো সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত্রি হলো মুরগী টা আর তার বাসা ছেড়ে বাহির হলোনা, রাজহাঁস চিন্তায় চিন্তায় দিশেহারা।পরদিন সকাল বেলায় মুরগী দেখলো সাতটা রাজহাঁসের ছানা তার ডানার নিচে খেলা করছে।আনন্দে মুরগী টা ডেকে উঠলো ক্কুরুকু ক্কুরুকু।মুরগীর ডাক শুনে মুরগীর মালিক এসে দেখলো মুরগী টার ডানার নিচে সাতটা রাজহাঁসের ছানা এবং একটা রাজহাঁসের নষ্ট ডিম। তখনি মালিক রাজহাঁসের ছানা গুলো মুরগীর বাসা থেকে বাহির করে রোদে এনে ছোট ছোট চালের খুদ খেতে দিলো।দূর থেকে মনমরা রাজহাঁস তার ছানা গুলো দেখে দৌড়ে ছানাদের কাছে আসলো।কিন্তু বিপদ বাদলো তখনি যখন রাজহাঁস এবং মুরগী দুজনেই রাজহাঁসের ছানা গুলোকে নিজের সঙ্গে রাখতে চাইলো।রাজহাঁস বললো ছানাগুলো আমার ডিম থেকে হয়েছে তারা আমার বংশধর অন্য দিকে মুরগী বললো তুমি ডিম দিয়েছো ঠিক কিন্তু গত একটা মাস আমি ঐ ডিমে তাপ দিয়েছি দিনরাত্রি নিজের খাওয়া দাওয়া ভুলে সুতরাং এগুলো আমার ছানা। এভাবে দুজনের মাঝে ছানা নিয়ে শুরু হলো তুমুল যুদ্ধ। রাজহাঁস মুরগীর মাথায় একটা ঠুকর দিলো তো মুরগী রাজহাঁসের মাথায় দুটো ঠুকর দিলো।মুরগী বলে এগুলো আমার ছানা রাজহাঁস বলে না এগুলো শুধুই আমার ছানা।তখনি শুরু হলো ঝড় বৃষ্টি আর প্রচুর ঝড় বৃষ্টির মাঝে দুজনের যুদ্ধ চলছে তো চলছেই।অন্য দিকে ছানা গুলো বাসার পাশে যে বিল ছিল যেখানে অথৈজলের খেলা সেখানে জলে খেলতে দৌড়ে গেলো।একে অন্যের শরীরের বিলের পানি সাঁতারে ছিটিয়ে দিচ্ছে আর মনের সুখে খেলা করছে। একটা ছানা তো ছোট মাছের পোনা দেখে জলের মাঝে ডুব দিয়ে অনেক দূরে চলে গেলো মাছটাকে ধরতে। ছোট ছানা গুলো যে মুরগী এবং রাজহাঁস কে রেখে বিলের মাঝে চলে গেছে এটা মুরগী এবং রাজহাঁস কেউ লক্ষ করেনি তারা তো দুজন ব্যস্ত হয়ে গেছে কে কাকে যুদ্ধে হারিয়ে ছানা গুলো নিজের দখলে নিবে।প্রচুর ঝড় বৃষ্টির সাথে একেরপর এক বজ্রপাত হচ্ছিল। তখন সাতটা ছানা বজ্রপাতের শব্দে ভয় পেয়ে কচুরিপানার আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করছি এবং গলা ছেড়ে মুরগী ও রাজহাঁস কে ডেকে যাচ্ছিল।কিন্তু রাজহাঁস ও মুরগীর যুদ্ধ তখনও চলছিলো।মুরগীর মাথা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, রাজহাঁসের পিঠের পালক তুলে ফেলেছিল মুরগী আর সেখান থেকেও রক্তক্ষরণ হচ্ছিল,তবুও তাদের যুদ্ধ থামানোর কোন লক্ষ্মণ ছিল না। হঠাৎ একটা বড় বজ্রপাত সাতটা ছানার উপর এসে পরে এবং সাতটা ছানা একি সঙ্গে বজ্রপাতে মৃত্যু বরণ করে এবং জলের মাঝে তাদের মৃত দেহে ভেসে যায়। এরপর,,,,,,