1. info@dainiknetrojolsahitthomagazine.com : দৈনিক নেত্রজল সাহিত্য ম্যাগাজিন : দৈনিক নেত্রজল সাহিত্য ম্যাগাজিন
  2. info@www.dainiknetrojolsahitthomagazine.com : দৈনিক নেত্রজল সাহিত্য ম্যাগাজিন :
শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ১১:৩১ অপরাহ্ন

ছোট গল্প:জীবন্ত লাশ কবি: উম্মি হুরায়েরা বিলু

  • প্রকাশিত: শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১০৮ বার পড়া হয়েছে

শিরোনামঃজীবন্ত লাশ
কলমেঃ উম্মি হুরায়েরা বিলু

ছোট রুহি হাজারো স্বপ্ন নিয়ে বড় হচ্ছে,
স্বপ্ন দেখছে লেখা পড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার।
ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছে অভাবের সংসার, চাল আনতে ডাল ফুরিয়ে যায়।

মানুষটা ছোট হলেও বাস্তবতা তাকে অনেক কিছু বুঝতে শিখিয়েছে এই বয়সেই।
সে ভাবে লেখা পড়া শিখে অনেক বড় হবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে।
বাবাকে সাহায্য করবে তখন আর তাদের অভাব থাকবে না,
অন্যদের মতো তখন তারা কুঁড়ে ঘর বাদ দিয়ে পাকা বাড়ি করবে।
মজার মজার খাবার খাবে।
রোজ এমন হাজারটা স্বপ্ন সে আপন মনে বুনতে থাকে।
আর তার মাকে শুনাতে থাকে সে বড় হয়ে কি কি করবে।
তার হাসি খুশি জীবনে হঠাৎ ই নেমে আসলো কালবৈশাখী ঝড়!
দেশে যুদ্ধ শুরু হয়েছে আর সেই যুদ্ধেই তার প্রাণ প্রিয় বাবা নিহত হয়েছেন।
এ ঝড় যেন রুহির জীবনে তান্ডব চালিয়ে সব লন্ডভন্ড করে দিয়ে গিয়েছে।
রুহির বাবা সামান্য একজন রিক্সা চালক।
রিক্সা চালিয়ে দু’বেলা দুমুঠো ভাত জোগাড় করাটাই ছিল তাদের জন্য কষ্টের।
একে তো বাবা হারানো শোক, দ্বিতীয় তো বাবা নেই কিভাবে চলবে এই অভাবের সংসার।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো তিন দিন ঘরে যেটুকও চাল ডাল যা ছিল সব শেষ।
আজ আর মায়ের চুলাতে আগুন জ্বলে নেই।
আজ আর রান্না ও হবে না,
কি বা করবে রান্না ঘরে যে আর অবশিষ্ট কিছু ই নেই।
রুহি এখন আর হাসে না আর প্রজাতির পিছনে ছুটে বেড়ায় না।
এখন আর যায় না বন্ধুদের সাথে খেলা করতে।

সারাদিন ছোট্ট ঘরটায় বাবার শার্ট বুকে জড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সেই যে প্রথম বাবার লাশ দেখে কেঁদে ছিল আর এই তিন দিনে একবারও সে কাঁদে নেই না কারো সাথে কথা বলেছে।
রুহি কেমন যেন নির্জন দ্বিপ্রহরের মতো চুপচাপ হয়ে গেছে।
এভাবেই কাটতে লাগলো দিন, রুহির কল্পনাতেও ছিল না তাদের জীবনে আরো কোনো ঝড় আসা বাকি ছিল।
রাতে ঘুমের মাঝে হঠাৎ ই তার ঘুম ভেঙে গেলো কারণ তার বিছানাটা ভিজে আছে,
সে অন্ধকার উঠ বসলো মাকে ডেকে তুললো।
মা উঠে দেখলেন তাদের ছোট্ট কুঁড়ে ঘরটা প্রায় পানির নিচে যায় যায় অবস্থা, খাটে ও পানি ছুয়ে গেছে।
এই রাতে কোথায় যাবেন সে ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে!?
দিশেহারা হয়ে বসে রইলেন,
হঠাৎ করে তার হুঁশ ফিরলো তাদের যেটুকও সম্বল ছিল তা গুছিয়ে নিলেন।
এর ভিতরে ফজরের আজানের সুর ভেসে আসছে চারিদিকের মসজিদ থেকে।
এতো সময় টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিল, এখন বৃষ্টির জোর বেড়ে গেছে সেই সাথে বেড়ে যাচ্ছে পানির পরিমাণ।

চারিপাশ থেকে এখন ভেসে আসছে হাহাকারের শব্দ কারণ উঁচু উঁচু ঘর গুলোতেও এখন পানি ঢোকা শুরু করেছে।
কোথায় যাবে ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে তা ই ভেবে পাচ্ছে না।
প্রবল স্রোতে আর দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না,
পানিও বুক অব্দি চলে আসছে,
রুহিকে নিয়ে কাপড়ের টুপলিটা আর ধরে রাখা সম্ভব হলো না শেষ সম্বল টুক ও পানির সাথে ভেসে চলে গেলো!

লোকজন নৌকায় করে আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছে নিজেদের ঘর বাড়ি ছেড়ে।
অনেকে যেতে চাচ্ছে না কারণ কে ই বা চায় শেষ সম্বল টুকু ছেড়ে যেতে।
তাও প্রাণ বাচাতে যেতে হচ্ছে।
ছোট একটা নৌকা এসে থামলো রুহিদের সামনে,
সেখানে মাত্র একজনই যাওয়ার জায়গা আছে রুহির মা তার প্রাণ প্রিয় সন্তানকে নৌকায় তুলে দিয়ে বললেন, তুমি যাও সোনা আমি পরের নৌকায় আসবো।
বাবা মারা যাওয়ার পরে রুহি এই প্রথম কথা বললো,
সে তার মাকে ছেড়ে যাবে না কোনো মতেই সে একা যাবে না।
সবাই অনেক বুঝিয়ে তার রুহিকে নিয়ে গেলো।
রুহি করুণ চাহনিতে চেয়ে রইলো মায়ের দিকে হয় তো অনিশ্চয়তায় ভুগছে।
দেখতে দেখতে আজ দু’দিন পার হয় গেলো কিন্তু রুহির মার কোনো দেখা নেই।
রুহি শুধু অপেক্ষায় আছে কখন মা আসবে।
তার যে মা ছাড়া আর কেহ নেই এই জগতে।
হঠাৎ রুহির গ্রামের এক পরিচিত চাচা রুহির হাত ধরে বললো, চল আমার সাথে।
সে বিনাবাক্য ব্যয়ে চলতে শুরু করলো কিন্তু সে জানতো না তার জন্য এমন কিছু অপেক্ষা করছে!
কাপড় দিয়ে ঢাকা একটা লাশ আশ্রয় কেন্দ্রর এক পাশে রাখা হয়েছে আজ ফজরের সময় ভেসে এসেছে।
কাপড় সরাতেই রুহি চমকে গেলো কারণ এটা যে তার মায়ের লাশ।
সে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করতে শুরু করলো,
কেন আমায় একা আসতে বললে মা?
কেন ছেড়ে গেলে?
বাবা চলে গেলো তোমায় নিয়ে বাঁচতাম, তুমিও আমায় একা করে চলে গেলে।
এমন হাজারো অভিযোগ সে তার মায়ের কাছে করতে লাগলো।
এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
আজ পাঁচ দিন কেঁটে গেছে রুহির মায়ের মৃত্যুর,
দূর্ভাগ্যবশতঃ লাশটা মাটি দেওয়ার মতো একটু উঁচু জায়গা পাওয়া যায় নেই।
পানিতেই ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রুহি সেই যে জ্ঞান ফিরার পরে থেকে চুপচাপ আজ পাঁচ দিনেও কোনো কথা সে বলে নেই।
শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে সব, এ যেন এক জীবন্ত লাশ।
দেখতে দেখতে বন্যার পানি কমা শুরু করলো, সবাই বাড়ি ফিরতে শুরু করছে।
কিন্তু রুহি জানে না সে কোথায় যাবে তাও সে নির্জীব তার ভিতরে নেই কোনো চিন্তা শুধু ক্লান্ত চোখে চেয়ে আছে।
কে নিবে এই রুহির দায়িত্ব?
নাকি রুহি নামক সুন্দর ফুলটি এভাবেই ঝরে যাবে?
সেও কি হয়ে যাবে পথশিশু?
থমকে যাবে কি তার জীবন?
অপূর্ণ ই কি থেকে যাবে তার স্বপ্ন গুলো?
কি হবে তার ভবিষ্যৎ?
কোনো আত্মীয় স্বজন তো এগিয়ে এসে বললো না চলে রুহি আমাদের সাথে।
কেন এতোটা নিষ্ঠুর এই ভুবন?
বন্যার জলের সাথে সাথে কেড়ে নিয়েছে এমন হাজারো রুহির শেষ সম্বলটুকু।

শেয়ার করুন

আরো পড়ুন
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট