1. info@dainiknetrojolsahitthomagazine.com : দৈনিক নেত্রজল সাহিত্য ম্যাগাজিন : দৈনিক নেত্রজল সাহিত্য ম্যাগাজিন
  2. info@www.dainiknetrojolsahitthomagazine.com : দৈনিক নেত্রজল সাহিত্য ম্যাগাজিন :
শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫২ অপরাহ্ন

কবিতার ব্যাকরণে বিভিন্ন বৃত্তকে কবিতার ছন্দ বলা ও অন্যান্য অসঙ্গতি!

  • প্রকাশিত: বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১২১ বার পড়া হয়েছে

কবিতার ব্যাকরণে বিভিন্ন বৃত্তকে কবিতার ছন্দ বলা ও অন্যান্য অসঙ্গতি!

বিশেষ প্রবন্ধ – ছন্দ ও বৃত্তগুলি যে সমার্থবোধক নয়, সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় তা’ বোঝানোর জন্য বৃত্তগুলি উদাহরণ সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সকল সাহিত্যিক, সাধারণ ও বোদ্ধা জনগণের জেনে বোঝার জন্য, আঁতেলদের জন্য নয়!
**কৃষিবিজ্ঞানী মীর মোঃ মুনিরুজ্জামান
১৬/০১/২০১৯ – ১০/০৬/২০২৪ খ্রীঃ

ভূমিকাঃ আমি একজন ‘কৃষি গবেষক’ তথা ‘গবেষক/বিজ্ঞানী’ হিসাবে সব বিষয়ে ক্যাচাল/জটিলতা, মানে যে কোন বিষয়, ঘটনা বা কাজের সঠিক কার্যকারণ ও সুবিধা অসুবিধা খুঁজে বের করে তা সংশ্লিষ্টদের ব্যবহারের জন্য প্রমান সহ আমজনতার দরবারে হাজির করাই আমার কাজ। আগে চাকুরীর স্বার্থে কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজের বিষয়ে ঘাটাঘাটি করলেও “অভ্যাস যায়না মরলে’ প্রবাদের সত্যতা পুনঃ প্রমানিত করতে বর্তমানে অবসর জীবনে কবিতার ব্যাকরণ নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করেছি এবং আমার প্রাপ্ত কিছু বিশেষ অসঙ্গতি (একান্তই আমার নিজের, কাউকে আঘাত দেওয়ার জন্য নয় !) সংশ্লিষ্ট সবার জানার জন্য আলোচ্য প্রবন্ধের অবতারণা !

কবিতাঃ কোন নির্দিষ্ট ভাষায় ছন্দায়িত (তাল, লয়ে) ভাবে গুরুত্বানুযায়ী পরস্পর সম্পর্কীত সুসামঞ্জস্যপূর্ণ শব্দের পর্ব, পংতি, চরণ, অনুচ্ছেদের মেলবন্ধনে বলে বা লিখে মনের নির্দিষ্ট কোন নান্দনিক ভাবনার প্রকাশই হল কবিতা। কবিতা ছন্দায়িত হতেই হবে! ছন্দই কবিতার প্রাণ!
সংক্ষেপে বলা যায়ঃ
ভাবনা, ভাষা, ছন্দ, মাত্রা
চারে মিলে হয় কবিতা!
(দুই পংক্তির মিত্রাক্ষর ছন্দে পদ্য
বা পয়ার ধরণের কবিতাংশ,
স্বরবৃত্তে ৪+৪//৪+৪ মাত্রা!)

আরো একটি ছড়া/কবিতা —-
দেখে তোমার / সুন্দর মুখের
// মোহনীয় / হাসি,
মোর অন্তরে / সদা বাজে
// রাখালিয়া / বাঁশী !!

(স্বরবৃত্তে চার পংতির দুই চরণের শেষ অক্ষরের অন্ত্যমিলে
(অনুপ্রাস/মিত্রাক্ষরে) এক অনুচ্ছেদে লেখা, ৪+৪//৪+২ মাত্রা,
+ দিয়ে পর্ব ও // দিয়ে পংতি বিভক্তি দেখানো হয়েছে !)

পর্ব (মূল পর্ব, অপূর্ণ পর্ব, উপ পর্ব, অনতি পর্ব, অতি পর্ব), পংতি/লাইন, চরণ/বাক্য, ছন্দঃ আগেই বলেছি যে, ছন্দই হলো কবিতার প্রাণ। গুরুত্বানুযায়ী পরস্পর সম্পর্কযুক্ত সুসামঞ্জস্যপূর্ণ যে কয়টি শব্দ (স্থানীয় বা আঞ্চলিক উচ্চারণ দোষ মুক্ত ও সঠিক বানানের, মাত্রা সমতা রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট বৃত্তের আওতায় প্রয়োজনে সমার্থক শব্দ প্রতিস্থাপন যোগ্য) প্রতিবারে উচ্চারিত হয়, তা’ই হল পর্ব। একটি নির্দিষ্ট পর্বে এক বা একাধিক শব্দ থাকতে পারে, তবে পর্বে ব্যবহৃত শব্দগুলিকে বিভিন্নভাবে সাজানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভাষার ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্য, শব্দের গঠন, প্রকৃতি, শ্রুতি মাধুর্য এবং কোন শব্দের উপর অধিক প্রাধান্য/গুরুত্ব দেয়া হবে/হচ্ছে, অন্ত্যমিল, ইত্যাদি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সাধারনতঃ নাম বিশেষণ শব্দ/পদ নাম (বিশেষ্য) ও সর্বনাম পদের পরে এবং ক্রিয়া বিশেষণ ও বিশেষণীয় বিশেষণ ক্রিয়া বা বিশেষণ শব্দ/পদের আগে বসে। গুরুত্বানুযায়ী পরস্পর সম্পর্কযুক্ত সুসামঞ্জস্যপূর্ণ শব্দগুলি প্রতি পর্বে তাল (স্বরের উঠা, নামা, দ্রুততা বা ধীরতা) এবং লয় (ছেদ, থামা বা বিরতি) এ সুন্দর মনকারা শ্রুতিমধুরভাবে সাজিয়ে উচ্চারিত বা উপস্থাপিত হওয়াই হলো ছন্দ।

নীচের উদাহরনটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্যঃ

সঠিক সময় / করলে কর্ম্ম //
খেতে পারবে / আণ্ডা,
নইলে হয়তো / পেতে পারো //
ধমক, / কিংবা ডাণ্ডা !!
বিশ্লেষণঃ
কবিতাটি স্বর বৃত্তের মাত্রা মিলে লেখা, প্রতি শব্দ দুই মাত্রা বিশিষ্ট, প্রতি পংতিতে দুই পর্ব করে চার পংতি, প্রতি দুই পংতিতে এক চরন/লাইন করে দুই লাইন রয়েছে। প্রতি দুই শব্দের পর্বে মোট ২+২=৪ মাত্রার পূর্ণ পর্ব হিসাবে ছয়টি (১ম পংতিতে দুইটি ও ২য় পংতিতে ১টি – দুই পংতির প্রতি লাইনে ৩টি করে) পূর্ণ পর্ব এবং এক শব্দে ২ মাত্রা করে ২টি অপূর্ণ পর্ব (দ্বিতীয় পংতি বা প্রথম লাইনের শেষে হওয়ায় একটি অতিপর্ব এবং চতুর্থ পংতির প্রথমে হওয়ায় একটি উপ পর্ব বা দ্বিতীয় লাইনের মাঝে হওয়ায় অনতি পর্ব) রয়েছে। প্রতি লাইনের শেষ শব্দ দুইটির (২য় পংতি বা প্রথম লাইনের শেষে আণ্ডা এবং ৪র্থ পংতি বা দ্বিতীয় লাইনের শেষে ডাণ্ডা) উচ্চারণে মিল, তথা অন্ত্যমিল (অনুপ্রাস) রাখা হয়েছে।

প্রতি পর্বে শব্দ এবং পংতি ও চরণে বিভিন্ন পর্ব সাজানোর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে — (কবিতার প্রথম পংতিতে -)
সঠিক সময় / করলে কর্ম্ম > সময়ের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, স্বর বৃত্তে ৪+৪ মাত্রার মূলপর্বমিলে, দুই পর্বে – গুরুত্বানুযায়ী ছন্দায়িত ও শ্রুতিমধুরভাবে – এটিই সঠিক।

সঠিক সময় / কর্ম্ম করলে > সময়ের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, স্বর বৃত্তে ৪+৪ মাত্রার পর্বমিলে, দুই পর্বে – ছন্দায়িত, তবে শ্রুতিমধুর নয়।

কর্ম্ম করলে / সঠিক সময় > কর্ম্মের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, স্বর বৃত্তে ৪+৪ মাত্রার পর্বমিলে, দুই পর্বে – ছন্দায়িত ও শ্রুতিমধুরভাবে হলেও সঠিক নহে, কেননা অসময়ে ভালো কাজও মন্দ বলে পর্যবসিত হয়।

কর্ম্ম / সঠিক সময় / করলে > কর্ম্ম করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে, স্বর বৃত্তে ২+৪+২ মাত্রার পর্বমিলে, তিন পর্বে – স্বর বৃত্তে পর্ব মিল, ছন্দ, উচ্চারন ও শ্রুতিমধুরতা সঠিক নহে।

করলে / সঠিক সময় / কর্ম্ম > করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে, স্বর বৃত্তে ২+৪+২ মাত্রার পর্বমিলে, তিন পর্বে – স্বর বৃত্তে পর্ব মিল, ছন্দ, উচ্চারন ও শ্রুতিমধুরতা সঠিক নহে।

কবিতার ছন্দ ও বৃত্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব – মূল আলোচ্যঃ
কবিতার অনেক নাম করা ব্যাকরণবিদ বা জ্ঞানী/গুনী কবি, যেমন রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, প্রবোধ চন্দ্র সেন, বা অন-লাইন অভিধান বলে খ্যাত “উইকিপিডিয়া”র মতে তিন ধরণের বৃত্ত, যেমন – ১) স্বর বৃত্ত, ২) অক্ষর বৃত্ত ও ৩) মাত্রা বৃত্তকে তিন ধরনের ছন্দ (!) বলে উল্লেখ করেছেন/করে থাকেন এবং তিন ধরণের বৃত্তে দ্রুততা বা ধীরতা, মিষ্টতা বা তিক্ততা খুঁজে পেতে চেষ্টা করেন। আসলে এগুলি কতটা সঠিক তা বিবেচনা করার বিষয় বলে আমি মনে করি।

ছন্দ ও বৃত্ত কখনই এক নয়। ছন্দ ছাড়া কবিতা হয় না। আর, পংতি বা চরণে মাত্রা সমতা রাখা বা না রাখার জন্য কোন বৃত্ত মতে মাত্রা গোনা, পূর্ণ পর্ব, অপূর্ন পর্ব, উপ পর্ব, অতি পর্ব, অনতি পর্ব, ইত্যাদি সম্পর্কে না জানলেও ভালো কবিতা লেখা যায় এবং অনেকেই লিখছেন। বোকার মত বলতে হয়, পাঠ্য বইয়ের বিভিন্ন কবিতা পড়ে আমি যখন কবিতা লিখতে শুরু করি, তখন, এমনকি পরে পাঁচটি (প্রতিটি ৪-৫ ফর্মার) বই (১টি ২০০৫ খ্রীঃ সালে প্রকাশিত, অন্যগুলি প্রকাশিতব্য) এর কবিতা লিখেছি শুধু মাত্র পাঠ্য বইয়ের কবিতার ছন্দ, পংতি ও চরণ শিখে। কবিতার আর কোন ব্যাকরণ আমার জানা ছিলনা। তবে সৌভাগ্যের বিষয় উল্লেখ করা অনুচিত হবেনা যে, ৫০ বৎসর পূর্বে আমার আনাড়ী হাতের লেখা প্রথম গদ্য কবিতা “শুক্তি” কিছুদিন আগে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে প্রকাশিত করা হলে গত ১৯/১০/২০১৮ খ্রীঃ “শখের কবিতা ও সাহিত্য আড্ডা” গ্রুপের বিচারক মন্ডলী কর্তৃক ‘সেরা তিন-এর এক’ নির্বাচিত করে সম্মাননা পত্র দিয়ে আমাকে সম্মানিত করেছেন। আর এখন আমার দশা হয়েছে “প্রশিক্ষণ দেয়া” নাপিতের যত্রতত্র কাঁটাছেড়া করতে না পারার মত, কবিতার পর্ব, পংতি, চরণে ব্যবহৃত শব্দের মাত্রা সংখ্যা বিভিন্ন বৃত্তে (সমতা/অসমতার জন্য) গুনতে/মিলাতে গিয়ে আমার কবিতা লেখাই ভুলে যাচ্ছি !

বৃত্ত ও মাত্রা বিভাজন —–
বর্ণ ও অক্ষর এক নয়, সম্পূর্ণ আলাদা। উচ্চারণের সময় শব্দস্থিত এক বা একাধিক বর্ণ একত্রে বা আলাদা ভাবে উচ্চারিত হয়ে থাকে, যেগুলিকে শব্দাংশ বা অক্ষর বলে। অক্ষর অনেকটা ইংরেজী সিলেবল (Syllable) এর মতো। অক্ষর বলতে, আমরা একসঙ্গে কোন বর্ণে কতটা সময় অবস্থান করি, তার উপর নির্ভর করে ধরা হয়। যেমন, ক+ল+ম – এখানে বর্ণ আছে তিনটি, কিন্তু যখন শব্দটা উচ্চারণ করি তখন বলি ক+লম, অর্থাৎ অক্ষর এখানে ২টি। যখন একটি অক্ষরে একটিই বর্ণ থাকে, তখন সেটি ১ মাত্রা হবে। যেমনঃ ‘কলম’ শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে দুটি অক্ষর ক, লম্ পাওয়া যায়। এতে, ‘ক’ একাই একটি মাত্রা, এবং এটি মুক্তস্বর বা মুক্তাক্ষর। তবে যদি একাধিক বর্ণ মিলে একটি অক্ষর বুঝায়, তখন ঐ একাধিক বর্ণ মিলে এক বা দুই মাত্রা হবে।

কোন অক্ষর এক, নাকি দুই মাত্রা হবে সেটা বৃত্তের শ্রেণীবিভাগের উপর নির্ভর করে ‘কলম’ শব্দের ‘লম্’- একটি বদ্ধস্বর হওয়ায় স্বরবৃত্তে এক মাত্রা। আর শব্দের শেষের যুক্তাক্ষর হওয়ায় সেটি মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্তে দুই মাত্রা। এখন, একটি বড় শব্দের ক্ষেত্রে বোঝার চেষ্টা করি। যেমন, প্রত্যুৎপন্নমতি = প্রত্, তুৎ, পন্, ন, ম, তি। এখানে, ন, ম, তি এই তিনটি মুক্তাক্ষর এবং প্রত্, তুৎ, পন্, এই তিনটি বদ্ধাক্ষর। এ শব্দটি স্বরবৃত্তে ৬ মাত্রা হবে, বিভাজিত প্রতিটি অক্ষর এখানে এক মাত্রা। মাত্রাবৃত্তে ৯ (ৎ- কে এক মাত্রা ধরে) বা ৮ মাত্রা (ৎ-কে মাত্রা না ধরে বা বাদ দিয়ে)। অক্ষরবৃত্তেও ৬ মাত্রা হবে। অক্ষরবৃত্তে বদ্ধস্বর শব্দের শুরুতে বা মাঝখানে থাকলে ১ মাত্রা ধরা হয়, আর শব্দের শেষে থাকলে ২ মাত্রা ধরা হয়। এখানে প্রত, তুৎ, পন্ শব্দের শুরু বা মাঝখানে থাকায় এগুলো ১ মাত্রা হিসাবে গণ্য হবে।

এই বিভাজন দেখে স্বর, মাত্রা, আর অক্ষরের মধ্যে কনফিউশন বা সন্দেহের সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সবারই সতর্ক হওয়া দরকার। যেমনঃ ‘অঘটনঘটনপটিয়সী’ শব্দে ৯টি অক্ষর থাকায় স্বরবৃত্তে এখানে ৯ মাত্রা এবং অক্ষরবৃত্তেও ৯ মাত্রা হবে, কিন্তু মাত্রাবৃত্তে ১১ মাত্রা হিসাবে গণনা করা হবে।

মনে রাখা দরকার যে, অনেকের মতে “কাব্যে গতির সমতা রক্ষাকে মাত্রা বলে। মাত্রা সময় নিরূপক নির্দেশনা। কোন অক্ষরে কত সময় স্বর অবস্থান করবে, মাত্রায় তা উল্লেখ থাকে। আবৃত্তির ক্ষেত্রে মাত্রা অপরিহার্য। সময়ের পরিমাণ মাত্রা দিয়েই বোঝানো হয়। সঙ্গীতে যেমন : ধা। ধিন। ধিন। ধা। =৪ মাত্রা। তেমনি কাব্যে ছিপ।খান। তিন।দাঁড় । তিন।জন । মাল।লা=৮ মাত্রা।

বাস্তব ক্ষেত্রে বৃত্ত হলো মাত্রা গোনাগুনির একক, যার মাধ্যমে কবিতার (ছন্দময়) একাধিক পর্ব (মূল, পূর্ন, অপূর্ণ, উপ, অতি, অনতি), পংক্তি অথবা চরণের সমতা (পয়ার বা পদ্য, ছড়া ইত্যাদি) বা অসমতা (মুক্তক বা গদ্য ধরণের কবিতা) নির্ধারণ করতে পারি !

যে রকম ভাবে আমরা সময়, পরিমান/ওজন, পরিসীমা, ইত্যাদির একক প্রকাশের জন্য ব্রিটিশ, আমেরিকান ও দেশী পদ্ধতি রয়েছে, এই তিন ধরনের পদ্ধতিতে একই বস্তু মাপার ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়ে থাকে।

স্বরবৃত্তানুযায়ী শ্রবণ মতে কোন শব্দের সকল মুক্তাক্ষর ও যুক্তাক্ষর এক মাত্রা হিসাব করা হয়। অক্ষরবৃত্তে শ্রবণ ও দর্শন মতে শব্দের সকল মুক্তাক্ষর এবং প্রথম ও মাঝের যুক্তাক্ষর এক মাত্রা ও শেষের যুক্তাক্ষর দুই মাত্রা ধরা হয়। আর মাত্রাবৃত্তে শধু দর্শন মতে শব্দের প্রথম যুক্তবর্ণ এক মাত্রা এবং মাঝের ও শেষের যুক্তবর্ণগুলি দুই মাত্রা ধরা হয়। সকল মুক্তবর্ণই এক মাত্রা। অর্থাৎ শব্দের সকল মুক্তাক্ষর/মুক্তবর্ণ সকল বৃত্তেই এক মাত্রা। বিভিন্ন শব্দের (আঞ্চলিকতা দুষণ মুক্ত) নিজস্ব লিখন ও উচ্চারণ ভঙ্গী ও ধাঁচ রয়েছে। কোন অক্ষর বা স্বরে কয়টি মাত্রা হবে, তা নির্ভর করে বৃত্তের প্রকারভেদের উপর। অর্থাৎ, স্বরবৃত্তে কোনো একটি নির্দিষ্ট অক্ষরকে ১ মাত্রা ধরলেও অক্ষরবৃত্ত বা মাত্রাবৃত্তে যে সেটি ১ মাত্রা হবে, তেমন নয়।

উচ্চারণ অনুযায়ী শব্দে মুক্তাক্ষর ও যুক্তাক্ষরের আগেপরে উপস্থিতির জন্য বিভিন্ন ধরণের বৃত্তে একই শব্দের মাত্রা সংখ্যা কম বেশী হতে পারে। সঠিক শব্দ চয়নের মাধ্যমে কবিতার চরণে সব বৃত্তে মাত্রা সংখ্যা সমান রাখা সম্ভব। যেমনঃ

খোঁড়া গরু (৪) // পানি খেতে (৪)
ঘোলা জলে (৪)// নামে (২),
দেখে নাচে (৪)// বোকা মাছে (৪),
ভাসে (২)// ডানে বামে (৪)!!
(প্রতি দ্বিতীয় পংতি (খ ঘ) বা দুই চরণের (দুই পংতিতে এক চরণ) শেষের শব্দ উচ্চারণে অন্ত্যমিলের ছন্দায়িত ত্রিবৃত্তীয় (যে কোন বৃত্তে মাত্রা গুনলে একই, অর্থাৎ মাত্রা সংখ্যা সমান হবে) ছড়া/পয়ার/পদ্য ধরণের কবিতা!

স্বরবৃত্তে মূল পর্ব ৪ মাত্রার (যেমনটা অনেকেই বলে থাকেন !) ও অপূর্ণ পর্ব (মূল পর্বের চেয়ে ছোট) ৩, ২, ১ মাত্রার এবং মূল পর্বের আগের ছোট/অপূর্ণ পর্বকে উপপর্ব, মূল পর্বের পরের ছোট পর্বকে অতিপর্ব ও দুই মূল পর্বের মাঝের ছোট পর্বকে অনতিপর্ব বলা (অনেকেরই মতে) হলে উপরিউক্ত চার পংতি বা দুই চরণ বিশিষ্ট কবিতায় প্রথম চরন/লাইনে তিনটি ৪ মাত্রার মূল পর্বের শেষে ১টি দুই মাত্রার অপূর্ণ (অতি) পর্ব রয়েছে। ৪র্থ পংতির প্রথমে থাকায় অপূর্ণ পর্বটি উপপর্ব হবে, নাকি দ্বিতীয় চরণের মাঝে (১ম দুই মূল পর্বের পর ও শেষের মূল পর্বের আগে) থাকায় সেটি অনতিপর্ব অথবা শেষের পংতির প্রথম দুই শব্দকে মূল পর্ব ধরে শেষের শব্দকে অতি পর্ব বলা হবে, তা’ বিশেষ বিবেচ্য বিষয়।

কবিতা পাঠে দ্রুততা, ধীরতা এগুলি বিভিন্ন ধরণের শব্দ দিয়ে তাল, লয়ে ছন্দায়িত পর্ব গঠনের সাথে সম্পর্কিত। প্রত্যেকটি শব্দের গঠনশৈলী, বানান, প্রকৃতি, উচ্চারণ ইত্যাদিতে আলাদা নিজস্বতা বা স্বকীয়তা রয়েছে। কবিতায় লেখা কোন শব্দকে উচ্চারণ (আঞ্চলিক বা স্থানীয় উচ্চারন দোষে দুষ্ট না হলে) করার সময় বিভিন্ন বৃত্তমতে টেনে লম্বা করে বা ধীরে সংকুচিত করে বিকৃত করে পড়ার সুযোগ নেই !

চরণে মাত্রা সংখ্যা, পূর্ণ পর্ব, অপূর্ণ পর্ব, উপ পর্ব, অতি পর্ব, অনতি পর্ব, এগুলি বৃত্তের সাথে বদলায় বা একই থাকতে পারে, যা নিতান্তই আপেক্ষিক! তবে স্বরবৃত্তে অল্প সংখ্যক মাত্রায় বেশী সংখ্যক শব্দ উচ্চারিত হতে পারে বলে স্বরবৃত্ত দ্রুত, আর অক্ষরবৃত্তে বেশী সংখ্যক মাত্রায় অল্প সংখ্যক শব্দ উচ্চারিত হতে পারে বলে অক্ষরবৃত্ত ধীর গতির, তেমনি মাত্রাবৃত্ত অক্ষরবৃত্তের চেয়ে ধীর গতির এমন ভাবা মোটেই ঠিক নয়।

নীচে উল্লেখিত কবিতাটি মিত্রাক্ষরে (প্রতি ২য় পংতি বা দুই পংতির প্রত্যেক চরণের শেষ অক্ষরের উচ্চারণ মিল বা অন্তমিলে) তিন বৃত্ত মিলে লেখা। বিভিন্ন পর্বে ব্যবহৃত শব্দগুলির মাত্রা সংখ্যা তিন বৃত্তের যে কোন একটি ধরে গোনা যেতে পারে, যা প্রতি দ্বিতীয় পংতি (ক গ, খ ঘ) বা প্রত্যেক চরণে (দুই পংতিতে এক চরণ) সমান রাখা হয়েছে। বিভিন্ন বৃত্তে মূল পর্ব বিভাজনে মাত্রা সংখ্যা মিলাতে গেলে কোন কোন শব্দকে মাঝখানে ভাঙ্গার (মধ্য খণ্ডন) দরকার হতে পারে। ইচ্ছা করলে অন্য বৃত্তেও মাত্রা গুনতে পারা যাবে। সেক্ষেত্রে শব্দ উচ্চারণে গতির দ্রুততা বা ধীরতা বোঝার কোন অবকাশ থাকার কথা নয়। কে, কোন বৃত্ত মিলে মাত্রা গুনে লিখেছেন তা-ই বিবেচ্য।

কবিতাঃ সোনালী পাখী –
শব্দের ছন্দায়িত পর্বমিলে
মিত্রাক্ষরে ত্রিবৃত্তীয় পদ্য ধরণের কবিতা!
১২//১০ মাত্রা।
কৃষিবিদ মীর মোঃ মুনিরুজ্জামান।
২৫/০১/২০১৯ খ্রীঃ

পৃথিবীতে সৃজিত সবারি মাঝে
সেরা আমরা মনুষ্য জাতি,
সংসারেরি ঘেরে নানা অভিঘাতে
করি দুঃখ, সুখেরি বেসাতি।
ঘন সাদা কুয়াশা ঘেরা চাদরে
ঢাকা অচেনা সোনালী পাখী,
মনের খাঁচাতে থেকে অগোচরে
দিবানিশি করে ডাকাডাকি!
আমরা শুধু মনে হতাশা নিয়ে
চারিদিকে করি ঘোরাঘুরি,
কপালেরি লেখা ভুলে হীরা পেতে
বালিচরে করি খোঁড়াখুঁড়ি!
সকলেরে সযতনে ভালোবেসে
ভালো কাজেতে সদা কাটালে,
ধরণী ছেড়ে গেলেও থাকা যাবে
সুখেরি জীবনে পরকালে!!

বিঃদ্রঃ কবিতায় সবগুলি শব্দের অক্ষর (একবারে যে কয়টি বর্ণ উচ্চারিত হয়) মুক্তাক্ষর/ মুক্তবর্ণ হওয়াতে উপরোক্ত কবিতায় প্রত্যেক বাক্যে ব্যবহৃত শব্দের মাত্রা যে কোন বৃত্তে (স্বর বৃত্ত, অক্ষর বৃত্ত বা মাত্রা বৃত্ত) গুনলে একই বা সমান এবং প্রতি দুই বাক্যের শেষ অক্ষরটির উচ্চারন (অন্ত্যমিল) একই রকম। সেকারণে কবিতাটি মিত্রাক্ষরে ত্রিবৃত্তীয় কবিতা।

সংশ্লিষ্ট সকলের বোঝার জন্য বিশেষভাবে প্রনিধানযোগ্য যে –

ক) শব্দের গঠন ও উচ্চারণের উপর বিভিন্ন বৃত্তে (স্বর, অক্ষর, মাত্রা) মাত্রা সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
খ) কবিতায় ব্যবহৃত সকল শব্দের সকল মুক্তাক্ষর ও সকল প্রথম যুক্তাক্ষর স্বর (উচ্চারণ মতে) বা অক্ষর (উচ্চারণ ও দর্শন মতে) বৃত্তে এক মাত্রা। তবে মাত্রা (দর্শন মতে) বৃত্তে প্রথম যুক্ত বর্ণকে এক মাত্রা ধরা হয়, যুক্তাক্ষরের ক্ষেত্রে মাত্রা একাধিক হতে পারে!
গ) শব্দের মাঝের যুক্তাক্ষরগুলি স্বর (উচ্চারণ মতে) ও অক্ষরবৃত্তে (উচ্চারণ ও দর্শন মতে) এক মাত্রা এবং মাত্রাবৃত্তে (দর্শন মতে) দুই মাত্রা হয়ে থাকে।
ঘ) শব্দের শেষের যুক্তাক্ষর স্বরবৃত্তে (উচ্চারণ মতে) এক মাত্রা হলেও অক্ষর (উচ্চারণ ও দর্শন মতে) ও মাত্রাবৃত্তে (দর্শন মতে) দুই মাত্রা ধরা হয়।
ঙ) সাধারনতঃ মুক্তাক্ষর বা মুক্তবর্ণে গঠিত বা যুক্তাক্ষর বা যুক্তবর্ণ বিহীন শব্দ, একাধিক শব্দ দিয়ে গঠিত পর্ব ও একাধিক পর্বে গঠিত পংক্তি কিংবা চরণ (লাইন) এর মাত্রা সংখ্যা সব বৃত্তেই সমান হয়ে থাকে।
যেমনঃ খোঁড়া গরু / পানি খেতে // ঘোলা জলে নামে !
– এ লাইনটিতে মোট ১৪ টি অক্ষর ও ৭টি শব্দ আছে, যা স্বরবৃত্ত অনুযায়ী তিনটি পূর্ণ পর্ব (৪ মাত্রা) ও একটি অপূর্ণ (অতি) পর্বে (২ মাত্রা) লিখা বা বলা যায়। তবে যেহেতু বিভিন্ন শব্দে ব্যবহৃত সবগুলি অক্ষরই মুক্তাক্ষর, তাই এ লাইনটিতে সাধারণ ব্যাকরণের নিয়মানুযায়ী পরস্পর সম্পর্কিত বিভিন্ন শব্দে তাল, লয়ে গঠিত পর্বগুলিকে শ্রুতিমধুর/ছন্দায়িতভাবে যেভাবেই সাজানো হোক না কেন বা তিন বৃত্তের যে কোনটিই উল্লেখ করা হোক না কেন তাতে তার মাত্রা সংখ্যা সমান, অর্থাৎ ১৪ মাত্রাই হবে। বৃত্ত উল্লেখ বা না উল্লেখের জন্য ছন্দের হের-ফের বা অন্য কিছু যায় আসে না।
তবে, লাইনটির প্রথম দুই পর্বের একটি করে শব্দ এদিক সেদিক করে নীচের মত আগে পরে লিখলে কবিতার বৃত্তগুলির মাত্রা গোনাতে হের ফের না হলেও ছন্দেরতো ঠিক থাকবেই না, বরং অর্থেরও মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে যাবে।
যেমনঃ খোঁড়া পানি / গরু খেতে // ঘোলা জলে নামে!

চ) অনেকে বিভিন্ন বৃত্তের মিলে লেখা বিভিন্ন কবিতায় বিভিন্ন স্বাদ খোঁজেন, যেমনঃ স্বরবৃত্তের মিলে লেখা কবিতায় বেশী স্বাদ বা তাড়াতাড়ি উচ্চারণ করা যাবে! অক্ষরবৃত্তের মিলে লেখা কবিতায় একটু কম স্বাদ, মাত্রাবৃত্তের মিলে লেখা কবিতায় তার চেয়ে কম স্বাদ বা দেরীতে উচ্চারিত হয়, যা মোটেই সঠিক নয়! কবিতা যদি তেতো অর্থবোধক শব্দ দিয়ে লিখা হয়, তবে তার মাত্রা স্বরবৃত্তে গুনলে বেশী স্বাদ বা অন্য বৃত্তে গুনলে তুলনামূলকভাবে কম স্বাদ পাওয়া যাবে কিনা বা স্বাদের হেরফের হবে কিনা, তা বুঝে দেখার দরকার।

আরো একটি উদাহরণ দিচ্ছি—
শহরে তাড়াতাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে খাওয়ার জন্য রহীম বাড়িতে গেল। বাড়ীতে দুঃখজনক ভাবে কথা কাটাকাটির এক পর্য্যায়ে বৌয়ের সাথে রহীমের মারামারি হওয়ার কারণে তাদের উভয়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

উপরোক্ত গল্পকথা/গদ্যকে ছন্দায়িত কবিতা/ছড়া/পদ্যে নিম্নরূপে প্রকাশ করা যেতে পারে –
যেতে(২) শহরে(৩)/৫/ তাড়াতাড়ি(৪)//৯/,
খেতে(২) রহীমে(৩)/৫/ আসে(২) বাড়ী(২)/৪/৯/ !
দুঃখ(২) ঘটনা(৩)/৫/ ঘটে(২) ভারী(২)/৪/৯/,
বৌয়ে(২), রহীমে(৩)/৫/ মারামারি(৪)//৯/,
শেষে(২) হল(২) যে(১)/৫/ ছাড়াছাড়ি (৪)//৯/ !!

ছন্দায়িত ত্রিবৃত্তীয় ছড়া/কবিতা, ২+৩ (স্বরবৃত্তে ২+১ মাত্রায় মধ্যখন্ডন যোগ্য)/+৪, ২+৩/+২+২ দুই পর্বে তথা ৫/+৪=৯ মাত্রার প্রতি পংতি মিলে (সমিল) মোট ৫ পংতি, প্রথম ২ পংতিতে এক চরণ এবং পরের ৩ পংতিতে এক চরণ, মোট দুই চরণ/লাইন ! উপরোক্ত বিরহাত্মক কবিতায় শব্দের মাত্রা গোনার সাথে পড়ার ক্ষেত্রে ধীরতা, দ্রুততা, স্বাদযুক্ত বা স্বাদহীন খোঁজাও ঠিক কিনা, চিন্তা করে দেখা দরকার।

ছ) গদ্য কবিতায়ও পদ্য কবিতার মত পংতি বা চরনে নির্দিষ্ট ভাব প্রকাশক শব্দের সঠিক ছন্দ (পর্ব, তাল, লয়) থাকতে হবে। তাতে ব্যবহৃত পংতি বা চরণ দৈর্ঘ্যের সমতা না থাকলেও (অসম), ব্যবহৃত শব্দের মাত্রা যে কোন বৃত্তে গোনা সম্ভব। গদ্য কবিতা শুধু মাত্রাবৃত্ত বা অক্ষরবৃত্তেই লেখা যায়, এমনটা নয়, যেমনটা অনেকেই বলতে চেষ্টা করে থাকেন।
নীচের উদাহরণটি প্রনিধানযোগ্য —-

————–
তারপর/ দিন বদলের পালা,//
অনেক কষ্টে অর্জিত / স্বাধীনতা আজ / সকলের অন্তর্জালা!!
————— আগে পরে আরো লাইন আছে ———

লাইন দুইটির শব্দগুলি গুরুত্ব, সামঞ্জস্য, পরস্পর সম্পর্ক, সঙ্গতি ও পর্য্যায় অনুযায়ী ছন্দায়িতভাবে পর্বে সাজানো হয়েছে এবং মাত্রা সংখ্যা যে কোন বৃত্তের আওতায় গোনা সম্ভব হলেও দুই চরণের দৈর্ঘ্য সমমাত্রা বিশিষ্ট নয়। এগুলি গদ্য কবিতার (অমিল মাত্রার) চরণ। তবে চরণ দুটির শেষ শব্দ দুটির শেষ অক্ষরের উচ্চারণ একই ধরণের, অর্থাৎ অন্ত্যমিল (অনুপ্রাস) থাকায় এটি মিত্রাক্ষরে মুক্তক বা গদ্য ধরণের কবিতা। দুই চরণের শেষ শব্দ দুটির শেষ অক্ষরের উচ্চারণে মিল বা অন্তমিল না থাকলে হতো অমিত্রাক্ষরে মুক্তক। চরণগুলির মাত্রা দৈর্ঘ্য যে কোন বৃত্তানুযায়ী সমান রাখাও যেতে পারে। এ ধরণের সমিল মাত্রার কবিতা/ছড়া লেখায় মনে হয় কোন বাধ্যবাধকতা নেই। সবারই জানা থাকা ভালো যে, ভাব, ভাষা, ছন্দ ছাড়াও বিভিন্ন বৃত্তের আওতায় মাত্রা গুনে গুনে (পদ্য বা পয়ার (অক্ষর, মাত্রা বা স্বর বৃত্তের অন্তঃমিল বিশিষ্ট (মিত্রাক্ষর) বা ছাড়া (অমিত্রাক্ষর)) ৪x(x)+২ মাত্রার সমিল জোড় সংখ্যক চরণের কবিতা/ছড়া), গদ্য বা মুক্তক (অক্ষর, মাত্রা বা স্বর বৃত্তের অন্তঃমিল বিশিষ্ট বা ছাড়া অমিল (যে কোন সংখ্যক মাত্রার পংতি/চরণ দৈর্ঘের) জোড়/বেজোড় সংখ্যক পংতি/চরণের কবিতা/ছড়া), মাইকেল মধুসুদন দত্ত প্রবর্তিত সনেট বা চতুর্দশপদী (প্রতিটি অক্ষর বৃত্তের ১৪ মাত্রা দৈর্ঘ্যের চরনের ১৪ চরন, প্রথম আট চরণে সমস্যা, পরের ছয় চরণে সমাধান), অষ্টাদশপদী (প্রতিটি অক্ষর বৃত্তের ১৮ মাত্রা দৈর্ঘ্যের চরনের ১৮ চরন), লতিফা (সম বা অসম মাত্রা দৈর্ঘ্যের ছয় চরণের কবিতা, প্রতি দুই চরণে অন্তমিল), সপ্তর্ষী (সম বা অসম মাত্রা দৈর্ঘ্যের সাত চরণের কবিতা, প্রতি দুই বা সব চরণে অন্তমিল), রূবাঈ (সম বা অসম মাত্রা দৈর্ঘ্যের চার চরণের কবিতা, ক খ ঘ চরণে অন্তমিল), হাইকু (অক্ষর, মাত্রা বা স্বর বৃত্তের ৫-৭-৫ মাত্রার তিন চরণ), রেংগা বা তনকা (অক্ষর, মাত্রা বা স্বর বৃত্তের ৫-৭-৫-৭-৭ মাত্রার পাঁচ চরণ) কবিতা লেখা হয়ে থাকে।

এখানে আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ্য! বাংলা ভাষার সাধারণ ব্যাকরণ মতে একটি বাক্যে মোট পাঁচ ধরণের পদ রয়েছে! যেমন – বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়া ও অব্যয়! বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দকে এক-একটি পদ বলে! অন্যদিকে কবিতার ব্যাকরণ অনুযায়ী একটি পুরো বাক্য (এক বা একাধিক পংক্তি বা লাইনে) কে এক চরণ বা পা বা পদ হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে! যেমন – মাইকেল মধুসুদন দত্ত তাঁর লেখা চৌদ্দ পংক্তি/লাইন বা চরণ বা বাক্যে লেখা সনেট কবিতাকে চতুর্দশপদী কবিতা হিসাবে উল্লেখ করেছেন, এখানে চরণ অর্থ পা বা পদ! বাক্যের অন্তর্গত প্রতিটি শব্দকে এক-একটি পদ বলা, আর পুরো বাক্যকে এক-একটি পদ বলাও একটি বড় ধরণের অসঙ্গতি!

উপসংহার, সার সংক্ষেপ বা মোদ্দা কথাঃ
ছন্দ হলো কবিতার অবিচ্ছেদ্য অংশ বা কবিতার প্রাণ। পরস্পর সম্পর্কযুক্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ শব্দগুলি সঠিক বানানে আগে পরে তাল লয়ে হৃদয়গ্রাহীভাবে পর্ব, পংতি, চরণে সাজানোর সাথে ছন্দের সম্পর্ক।

অন্যদিকে বিভিন্ন বৃত্তগুলি কবিতায় ব্যবহৃত শব্দগুলিকে উচ্চারণ বা দর্শন মতে বিভিন্ন ভাবে ভেঙ্গে মাত্রা গোনাগুনির নিয়ম মাত্র। ছন্দের সাথে বিভিন্ন বৃত্তানুযায়ী মাত্রা গোনাগুনির কোন সম্পর্ক খোঁজা বা বিভিন্ন বৃত্তকে কবিতার ছন্দ বলা মোটেই সঠিক নহে বা নিতান্তই বাহুল্য। কোন বৃত্ত সম্পর্কে মোটেই না জানা থাকলেও শব্দগুলিকে তাল, লয়ে সাজিয়ে ছন্দায়িত আদর্শ কবিতা লিখা বা কবিতায় ব্যবহৃত শব্দের মাত্রা বিভিন্ন বৃত্তের আওতায় গুনে পর্ব, পংতি বা চরণ সমতা রাখা বা না রাখা সম্ভব। শব্দের মাত্রা গোনার সাথে কবিতায় ধীরতা, দ্রুততা, স্বাদযুক্ত বা স্বাদহীন খোঁজাও বাতুলতা।

বাংলা ভাষার সাধারণ ব্যাকরণে বাক্যে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দকে এক একটি পদ হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে! অন্য দিকে কবিতার ব্যাকরণে পুরো বাক্যকে পদ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে, যা অত্যন্ত বড় অসঙ্গতি!

বিষয়গুলি আমার মনে দাগ কেটেছে বলে মহান ভাষার মাসে সংশ্লিষ্ট সকল সাহিত্যিক বোদ্ধাদেরকে অকপটে বিস্তারিত জানালাম, সেগুলি খতিয়ে দেখার জন্য, যাতে কবিতা লিখিয়ে বা বলিয়েরা সবাই শুনে, জেনে, বুঝে মায়ের ভাষায় সঠিক গুনগত মানসম্পন্ন আদর্শ হৃদয়গ্রাহী কবিতা (পদ্য/গদ্য) উপহার দিতে পারেন সম্মানিত পাঠকদের অফুরান মনোরঞ্জনের জন্য !!

বিঃদ্রঃ গুরুত্বপূর্ণ বিধায় কিছু শব্দ বা বাক্য একাধিকবার লিখিত হয়েছে, সে জন্য অহমিকা মার্জনীয়।

সৌজন্যঃ Abdil karim Raz, Abdul Baten, Iqbal Hossain Jeeshan Ihojee, Ashauzzaman Asha, Hasan Mahmud, Tipu Rahman, MD A M Mojnu Ahady, Maidul Islam Mukta, Jahirul Bidduth, Md Mohi Uddin Khokan, Faiz Ullah Jagoran, MD Shamim Hosen, Shamima Sultana, Rafia Sultana, Nur Nobi, SP Sobuj, Emamul Rana, Harunur Rashid Bhuiyan, Sagib Chowdhury, Komolendu Das, Mst Shamima Begum, Md. Anwarul Islam, Feroza khan Retired, Nilatpall Sikder, Saheb Mondol, Eusuf Miazy, Ruksana Mojumder Sukhi, কে. এম. জসীম উদ্দীন ফারুকী, মকসুদা হালিম, দেওয়ান রশীদ তালুকদার, এস এম সিরাজুল মুস্তফা, মোস্তফা হাবীব, মাসুদুল হক সোহাগ, খন্দকার জনী, হাওলাদার আজাদ, শিমুল হীরা, নুরুন্নবী হিরা, শিমুল কবীর, আলী আকবর প্রমূখ !!

বিজ্ঞ বন্ধুদের সদয় অবগতি ও গঠনমূলক মন্তব্য সাদরে আমন্ত্রিত। সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা….

** কৃষিবিজ্ঞানী মীর মোঃ মুনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, গাজীপুর, বাংলাদেশ, নিয়োগ, এসও, ১৯৮০ – অবসর পিএসও ২০১০!
কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ (সাধারণ ও ইসলামিক) ইত্যাদি বহুমাত্রিক লেখক – ১৯৬৯ থেকে অদ্যাবধি চলিত!

শেয়ার করুন

আরো পড়ুন
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট