অনুগল্প
শিরোনামঃ ইচ্ছাপূরণ
কবি: চন্দন বৈদ্য
...ফুটপাতই রামুদের ঠিকানা ৷ সেদিন হেমন্তের সন্ধ্যা বেলা ।
'মা শিশু দিবস কি?সে সময় শিশুরা কি করে? মাকে জিজ্ঞেস করে রামু৷
আমাদের দেশে এদিনটি শিশুদের। এদিন আসলে পন্ডিত জহরলাল নেহেরুরও জন্মদিন৷ তাঁর জন্মদিনর শিশুদের উৎসব হয়৷ সব স্কুলে দিনটি শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়৷
এদিন সব শিশু ও বয়স্করা মিলে নানারকম অনুষ্ঠান সংগঠিত করে। শিশু উদ্যানে,টাউন হলে মনোরম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়৷ সেখানে শিশুরাই মূলত অংশ নেয়৷ শিশুদের পুরস্কৃত করা হয়।
ওদের প্রতিভার বিকাশের একটা দারুন সুযোগ ঘটে৷ কৌতূহলী রামু মাকে বলতে লাগল- 'মা, আমরা তো রাস্তায় থাকি! আমাদের কথা কেউ কি ভাবে? আমারা কি আর সেখানে অংশ নিতে পারব? আমি কিভাবে উৎসব করব, আনন্দ করবো?
মা বলল, হ্যাঁ রে বাবা কি করে করবি?
রামু বিরবির করে বলে চলল, 'আমাদের সবাইকে অনেকদিনই তো খালি পেটে থাকতে হয়। তো কি করেইবা উৎসব করবো মা?
মা বলতে লাগলো, ইচ্ছা মতো কি আর উৎসব করা কি যাবে? হ্যাঁ, তবে শুনেছি শান্তা বুড়ো শিশুদের ইচ্ছা পূরণ করে। কিন্তু ভাবছি সে কি আসবে তোর ইচ্ছা পূরণ করতে? একটু ভেবে মা ই আবার বলে উঠলেন, তার মনে হচ্ছে এবার শান্ত বুড়ো এসে তোর ইচ্ছা পূরণ করবেন। রামুর মুখমন্ডল জুড়ে যেন আনন্দের আল্পনা৷
রামু বলল,শান্তা বুড়ো আমাদের ইচ্ছা পূরণ করবে তো!
মা তার কান্না লুকিয়ে মুচকি হেসে বলল, হ্যাঁ রে বাবা করবে । তুই এখন ঘুমাও তো দেখি এবার।
রামু বলল ,মা খুব খিদে পাচ্ছে।
মা তার ছেলেকে বললো ,বাবা আজ ঘুমিয়ে পড়। কাল শান্তা বুড়ো তোর জন্য অনেক খাবার আনবে।
রামু খুশি হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
এসব ভাবতে ভাবতে এক সময় রামুর মা ও ঘুমিয়ে পড়লো।
পরের দিন সকালে চারিদিকে কুয়াশা, শহর ভর্তি আলো তখনো নিভেনি, হঠাৎ তাদের আর শীত করছিল না।
ঘুমের ঘোরে মা চোখ খুললো ,সামনে সত্যিই দাঁড়িয়ে আছে শান্তা বুড়ো।
তখন তার মা তাড়াতাড়ি রামু কে ডাকলো।
এ দেখ বাবু ,তোর শান্তা বুড়ো এসেছে ।তোর জন্য খাবার এনেছে। তোর উৎসবের জন্য সব জিনিসপত্র নিয়ে এসেছে।
শান্তা সেজে থাকা সঞ্জয় বলল, এ দেখ ,খাবার, খেলনা তোমাদের সবার জন্য। উৎসব করার জন্য চকলেট, ফুল আরো কত কিছু নিয়ে এসেছে।
'সব বাচ্চাদের ডাকো, সবাই মিলে খাবার খাও, আনন্দ করো। শিশু উৎসব পালন কর।
ফুটপাতে থাকা সব বাচ্চারা আনন্দে মেতে উঠলো শান্তা বুড়োর সাথে।
ওদের ইচ্ছা পূরণ হলো।