বহুগুণে গুণান্বিত সফল নারী উদ্যোক্তা, জননন্দিত রন্ধন শিল্পী কে এই হাসিনা আনছার?
মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি:
“দৃঢ় মনোবল, প্রবল ইচ্ছা শক্তি, আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য ও কাজের প্রতি ভালবাসা থাকলে সব কাজেই সফল হওয়া সম্ভব” – উদ্যোক্তা হাসিনা আনছার নাহার।
মুক্তিযোদ্ধা বাবার মেধাবী সন্তান উদ্যোক্তা হাসিনা আনছার নাহার। কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বর্তমান সময়ের এই সফল উদ্যোক্তা। বাবা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা, সমাজ সেবক, রাজনীতিবিদ, কুষ্টিয়া চেম্বার অফ কমার্স এর প্রেসিডেন্ট, কুষ্টিয়া পৌরসভার কমিশনার।
কুষ্টিয়া সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে তৎকালীন স্টার মার্কস পেয়ে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন এবং কুষ্টিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে লেটার সহ উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন এই মেধাবী উদ্যোক্তা। ছোটবেলা থেকেই নাহারের ইচ্ছে ছিল বাবার মতোই সমাজ সেবামূলক কাজ করার, অসহায় দু:স্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। বাবা-মাও সবসময় উৎসাহ দিতেন মেয়েকে।
সংসার জীবনে স্বামী ও সন্তানদের সু-স্বাস্থের কথা চিন্তা করে স্বাস্থ সম্মত পুষ্টিকর খাবার তৈরি করতে করতেই হয়ে উঠেন একজন রন্ধন শিল্পী। নিত্য নতুন খাবার তৈরি করা এক রকম নেশায় পরিণত হয় নাহারের। পরিবার ও শ্বশুর বাড়ির সকলের কাছ থেকে পেলেন প্রশংসা ও উৎসাহ। সকলের প্রশংসা ও উৎসাহে দুই ছেলের পরামর্শ ও সহযোগিতায় শুরু করেন ক্যাটারিং ব্যবসা। যাত্রা শুরু করে নাহারের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান “নাহার কুকিং ওয়ার্ল্ড”।
মাল্টি কুইজিনের উপর প্রশিক্ষণ নেয়ায় সব ধরণের খাবার তৈরি করতে পারেন। বর্তমানে একজন প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করছেন নাহার। তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে বলে জানান নাহার।
নাহার জানান, ক্যাটারিং বিজনেস চলাকালীন সময় আমার মনে হলো, আমি যে খাবারটি রান্না করছি তাতে হাইজিং হ্যাজার্ড ঠিকমত মেইনটেইন হচ্ছে কিনা তা আমার সঠিকভাবে জানা উচিৎ। তৎক্ষণাৎ আমি সিদ্ধান্ত নিই রান্নার বিষয়ে আমাকে ব্যাপক পড়াশোনা করা প্রয়োজন। আমি শাহনাজ জামান আপা ও বন্ধু পলি জামান এর পরামর্শে ইন্টারন্যাশনাল কুলিনারি ইনস্টিটিউট থেকে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে প্রফেশনাল শেফ কোর্স লেভেল-১ কমপ্লিট করি। কোর্স চলাকালীন সময়ে হোম শেফ থেকে আমাকে ব্রিটিশ কলম্বিয়া স্কুলে বাচ্চাদের ও অভিভাবকদের ইজিওয়ে টিফিন বানানোর লাইভ প্রোগ্রামের অফার করে। আমি বিভিন্ন রকম ইজিওয়েতে বাচ্চাদের ও অভিভাবকদের টিফিন বানানো শেখাই। সবাই খুব পছন্দ করে। ইন্টারন্যাশনাল কুলিনারি ইনস্টিটিউট থেকে আমার ফলাফল ও অন্যান্য দিক বিবেচনা করে আমাকে স্কলারশিপ প্রদান করে। আমি বিনা খরচে, কারিগরি শিক্ষাবোর্ড থেকে এসেসর পার্ট লেভেল-৪ কমপ্লিট করি। আমি ইউসেফ থেকে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড এর অধীনে বেকিং লেভেল-২ কমপ্লিট করি। বর্তমানে আমি কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে কুকিং এর একজন এসেসর হিসেবে কাজ করছি।
যেহেতু আমি নারী তাই আমাকে অনেক ধরণের দায়িত্ব পালন করতে হয়। কখনো মেয়ের, কখনো মায়ের, কখনো ওয়াইফের। স্বামী সন্তান সংসার, শ্বশুরবাড়ী, আত্নীয়-স্বজন সবকিছু মেইনটেইন করে, সমস্ত কিছু ঠিক রেখে আমার ব্যবসাটি দেখতে হয়। আমার এই পথচলা মোটেও সুখকর ছিলো না। অনেক সময় অনেকেরই নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয়েছে। কিন্তু আমি তাদের এই কটু কথাতে কষ্ট না পেয়ে, মন খারাপ না করে বরং শক্তি হিসেবে নিয়েছি। তারা যতবারই আঘাত করেছে আমি ততবারই সাহসী নারীর মত আগের থেকে আরো শক্ত অবস্থানে নিজেকে এনে দাঁড় করিয়েছি। আরো শক্তভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করেছি। এদের এই কটু কথার কারনে আমি আরো বেশি কাজ করার উৎসাহ পেয়েছি। আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি নারীর নিজের একটি ব্যক্তিত্ব আছে, অস্তিত্ব আছে, নিজস্ব পরিচয় আছে। সে নিজের পরিচয়ে পরিচিত হতে চায়। আর সেটা অনেক সম্মানের। নিজে কিছু করার মধ্যে আনন্দ অনেক। শুধু মাত্র অর্থের জন্য নারীরা কিছু করে না, নিজের একটি পরিচয় তৈরি করতে, নিজের অস্তিত্বকে উপলব্ধি করতে সে কিছু একটা করতে চেষ্টা করে। ইচ্ছে করলে, চেষ্টা করলে সব নারীর দ্বারাই সম্ভব। সমাজের সব স্তরের মানুষের উদ্দেশ্যে বলবো আপনারা নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলান। নারীদের শুধু নারী নয় মানুষ হিসেবেও দেখুন। নারীদের সম্মান করুন। মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলবেো তোমরা ভালোভাবে পড়াশোনা করো শিক্ষিত হও। একজন শিক্ষিত মাই পারবে একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিতে।
আমার এই সফলতার পিছনে আমার পরিবার, শ্বশুর বাড়ির লোকজন, আমার বোন সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন। বিশেষ করে আমার দুই ছেলে আর আমার মা আমার সাথে ছায়ার মতো ছিলেন। আমার সকল জায়গায় আমার মা আমার সাথে গিয়েছেন। অনেকেই বিভিন্ন রকম কটু কথা বলেছে কিন্তু আমার মা আমার সাথে থাকায় ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসিনি। আমার শ্বশুর বাড়ির সবাই সাপোর্ট করেছে। তারা সব সময় উৎসাহ দিয়েছে। আমার কাজকে সম্মান করেছেন। তাই আজ আমি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হতে পেরেছি।
দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত রান্নার বিভিন্ন রেসিপি লিখছেন নাহার। এছাড়াও বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে নানান রকম সু-স্বাদু রান্নার কৌশল দেখাছেন প্রতিনিয়ত।
ভবিষ্যৎ নবীন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে নাহার বলেন, আমি মনে করি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে গেলে সততা, ধৈর্যশীলতা, নিষ্ঠাবান, পরিশ্রমী, দৃঢ় মনোবল, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ও কাজের প্রতি ভালবাসা থাকতে হবে। ব্যবসার প্রয়োজনে নবীন উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। সে যে বিষয় নিয়ে কাজ করতে চায় সে বিষয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিতে হবে। কাজ করতে গিয়ে অনেক রকম সমস্যা তৈরি হবে, নানান রকম বাঁধা আসবে, অনেকে অনেক কটু কথা বলবে এগুলোতে মন খারাপ না করে বরং চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে দ্বিগুণ কাজ করার মনোবল বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে সফলতা আসবেই।
নাহারের এই পথচলায় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্জন করেন সম্মাননা সনদ ও পুরষ্কার। অর্জন করেন নারী শিল্প উদ্যোক্তা সম্মাননা, কুকিং এসোসিয়েশনের পিঠা প্রতিযোগিতায় সারা বাংলাদেশ থেকে চতুর্থ স্থান। ১১তম ইন্টারন্যাশনাল পোল্ট্রি কুকিং কনটেস্ট থেকে সেরা দশে স্থান সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নিজের মেধা ও দক্ষতায় বেশ ভালো একটি অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হন এই উদ্যোক্তা।
তার এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরও বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন নাহার। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শাখা তৈরিরও পরিকল্পনা করছেন তিনি। এছাড়াও সমাজে যারা অবহেলিত, অসহায়, বিধবা, এতিম পথশিশু রয়েছে তাদের নিয়ে কাজ করতে চান। এদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে সমাজে একটি শক্ত অবস্থানে দাঁড় করাতে চান। সমাজের আর্থিক দিক দিয়ে সচল নয়, অর্থের অভাবে যারা প্রশিক্ষণ নিতে পারে না তাদেরকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ারও পরিকল্পনা করছেন এই সাহসী নারী উদ্যোক্তা। সাহসী এই নারী উদ্যোক্তার সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হোক, স্বপ্নগুলো সফল হোক। সার্থক হোক তার এই পথ চলা। হাসিনা আনছার একজন দেশসেরা সফল রন্ধনবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, প্রশিক্ষক : SME Foundation (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান), প্রধান নির্বাহী ও প্রশিক্ষক : নাহার কুকিং ওয়ার্ল্ড, প্রেসিডেন্ট : নাহার নারী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন,
উপস্থাপিকা : নোশন টেলিভিশন, আমরা অদম্য, সম্পাদক : ঐতিহ্যবাহী রান্না সেরা ১০০ রেসিপি, উপস্থাপিকা : আনন্দ টিভি, অদম্য নারী সম্পাদক, ঈদ রেসিপি -১, ঈদ রেসিপি -২, দৈনিক সকালের সময়,
সম্পাদক, শখের রেসিপি-ওমেন বাংলাদেশ,
সম্পাদক : ডেজার্ট কুইন ২০২৩- ওমেন বাংলাদেশ, কুকিং এসেসর – বিটিইবি,
গণসংযোগ সম্পাদক – কুকিং অ্যাসোসিয়েশন, সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর : ওমেন বাংলাদেশ।
Professional Training: 1. Professional chef course level-1, institute international culinary institute Under the Technical Education Board (BTEB). 2. Food & Beverage (cooking) level -2 (RPL), From Food Cadets Under the Technical Education Board (BTEB). 3. Level 3 – food & beverage (cooking) under the Technical Education Board (BTEB). 4. Bakery, Pastry & Patisserie level -1+2 advance besic update course from ICI International Culinary Institute. 4. NTVQF level -2 Baking Bread and Biscuit from UCEP under BTEB. 5. NTVQ Level 2 Baking, Cake & Pastry from Rangdhonu Academy under BTEB. 6. National skill development authority (NSDA) Food and beverage production level -3 from Rangdhonu Academy. 7. National skill development authority (NSDA)
Bakery & pastry production level -3 from Rangdhonu Academy. 8. Assessor part level -4 (cooking) under BTEB Bangladesh Technical Education Board. 9.Diploma course baking & cooking from upon ghor.
১০০ রন্ধনশিল্পীর ১০০ ঐতিহ্যবাহী রেসিপি নিয়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রান্না ১০০ রেসিপি বইটি করা। ৬৫ টি জেলা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে
এ বই প্রকাশ করার মূল উদ্দেশ্য হলো আমাদের যে আঞ্চলিক খাবারগুলো আছে ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো আছে যেগুলো বিলুপ্তির পথে সেগুলোকে আবার ফিরিয়ে আনা বই আকারে সংগ্রহে রাখা। একটি ম্যাগাজিন ৫ বছরের বেশি সংগ্রহে রাখা যায় না কিন্তু একটা বই যুগ যুগ ধরে থাকে। আমাদের নতুন প্রজন্ম অনেকেই আমাদের রেসিপি সম্বন্ধে জানেনা। তারা আসলে পশ্চিমা খাবারের দিকে বেশি ঝুকে পড়েছে তো এই বইটি আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য। এই বই এর মাধ্যমে আমাদের নতুন প্রজন্ম আমাদের দেশের যে আঞ্চলিক খাবার আছে তা যে কত পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যসম্মত সে সম্বন্ধে জানতে পারবে, বুঝতে পারবে এবং রেসিপি স্বাদও নিতে পারবে। এই উদ্দেশ্যেই এই বইটি তৈরী করা। আমাদের দেশের যে নানা রকম পিঠা আছে এই পিঠা সারা বিশ্বে কোথাও নেই আমরা এই বইয়ের মাধ্যমে আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরছি। সবার আগে দেশ এটাই আমাদের কনসেপ্ট। এক সময় আমরা থাকবো না কিন্তু এই বই কথা বলবে। যদি বিদেশ থেকে অথবা আমাদের দেশে যদি আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার নিয়ে কেউ কাজ করে, বা গবেষণা করে তখন যেন আমাদের এই বইটিকেই খুঁজে নেয়। আমাদের নতুন প্রজন্ম অনেকেই আমাদের রেসিপি সম্বন্ধে জানে না। তারা আসলে পশ্চিমা খাবারের দিকে বেশি ঝুকে পড়েছে তো এই বইটা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য। এই বই এর মাধ্যমে আমাদের নতুন প্রজন্ম আমাদের দেশের যে আঞ্চলিক খাবার আছে তা যে কত পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যসম্মত সে সম্বন্ধে জানতে পারবে, বুঝতে পারবে এবং রেসিপি স্বাদও নিতে পারবে। এই উদ্দেশ্যেই এই বইটি করা। আমাদের দেশের যে নানা রকম পিঠা আছে এই পিঠা সারা বিশ্বে কোথাও নেই আমরা এই বইয়ের মাধ্যমে আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরছি। সবার আগে দেশ এটাই আমাদের কনসেপ্ট। এক সময় আমরা থাকবো না কিন্তু এই বই কথা বলবে। যদি বিদেশ থেকে অথবা আমাদের দেশে যদি আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার নিয়ে কেউ কাজ করে, বা গবেষণা করে তখন যেন আমাদের এই বইটাকেই খুঁজে নেয়।